গাড়ির ফিটনেস চেক – গাড়ির নাম্বার দিয়ে ফিটনেস চেক করার নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম , আপনি কি গাড়ির ফিটনেস চেক করতে চাচ্ছেন ? এই কারণে আপনার গাড়ির নাম্বার দিয়ে ফিটনেস চেক করে কিভাবে সেটা জানার ইচ্ছা আছে ? তাহলে আজকের এই পোস্টটা আপনার জন্য।
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে পাঠকের আমরা গাড়ির ফিটনেস চেক এবং গাড়ির নাম্বার দিয়ে ফিটনেস চেক সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো । এই পোস্ট পড়লে আপনি আরো গাড়ির ফিটনেস কত টাকা এবং গাড়ির ফিটনেস নবায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
গাড়ির ফিটনেস ঠিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদি আপনার গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করা না হয় তাহলে ওই গাড়িটি চালানোর যোগ্যতা থাকেন। এই কারণে আপনাকে অবশ্যই আপনার গাড়ির ফিটনেস চেক করতে হবে নিয়মিত এবং সেটা নবায়ন ও করতে হবে।
গাড়ির ফিটনেস কি?
গাড়ির ফিটনেস চেক করার আগে আপনাকে অবশ্যই এই গাড়ির ফিটনেস কি এবং কেন সে সম্পর্কে জানিয়ে দিতে হবে। বর্তমানে বিআরটিসি থেকে বাংলাদেশের চালিত গাড়ি গুলো কে একটা সরকারি সনদ প্রদান করা হয়।
এই সরকারি সনদ হতে পারে বিভিন্ন মেয়াদের। কেউ এটা দুই বছর মেয়েদের ফিটনেস বানিয়ে নেয় আবার তিন বছর বা ৫ বছরের ও হতে পারে। আপনি যে মেয়াদেরই ফিটনেস বানিয়ে নেন না কেন সেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার আগেই অবশ্যই এটি নবায়ন করতে হবে।
এছাড়াও যে সমস্ত গাড়ি নতুন করে ফিটনেস করা হয়নি সেই সমস্ত গাড়ি চালানো যায়নি। যদি আপনার গাড়িতে ফিটনেস করা না থাকে এবং আপনার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তাহলে যে কোন সময় পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করতে পারে।
আশা করি গাড়ির ফিটনেস চেক সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার একটা ধারণা পেয়েছেন।
গাড়ির ফিটনেস কত টাকা
বন্ধুরা দেশে প্রত্যেকটা জিনিস ব্যবহারের জন্য সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়। আর এই ট্যাক্স বিষয়টি প্রতি বছরে তাদেরকে প্রদান করতে হবে।
যখনই ট্যাক্স এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তখনই আবার সরকার থেকে সেটিকে রিনিউ করতে হয় । যাই হোক আপনাদেরকে এখন আমি এই গাড়ির ফিটনেস কত টাকা সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
এখানে বলে রাখা ভালো প্রতিটা গাড়ির ফিটনেস এর দাম কিন্তু আলাদা আলাদা। আপনার গাড়ির ক্যাপাসিটর উপর আপনার গাড়ির ট্যাক্স বা ফিটনেস বিষয়টি নির্ভর করবে।
✓ যে সমস্ত গাড়ির সিসি ১৫০০ পর্যন্ত রয়েছে সে সমস্ত গাড়ির জন্য এই ফিটনেস এর মূল্য বা ট্যাক্স এর মূল্য আগে ছিল ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে এই ১৫ হাজার টাকা থেকে এটাকে বাড়িয়ে টোটাল পঁচিশ হাজার টাকা করা হয়েছে।
✓ ১৫০০ এর পরে ১৫০০ সিসি থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত যে সমস্ত গাড়ি রয়েছে সেগুলোর আগের ফিটনেস এর দাম ছিল মোটামুটি ২৫ হাজার টাকার মত। আর এই ১৫০০ থেকে ২০০০ সিসি গাড়ি গুলোর বর্তমান ট্যাক্স এর মূল্য করা হয়েছে ৫০০০০ টাকা।
✓ এমন কিছু গাড়ি পাওয়া যায় যেগুলো সিসি হচ্ছে দুই হাজার থেকে তিন হাজারের মধ্যে। আর এই 2000 থেকে 3000 এর মধ্যে সিসি থাকা গাড়িগুলোর বর্তমানে ট্যাক্স এর মূল্য করা হয়েছে এক লক্ষ টাকা।
✓ যাদের গাড়ির সিসি এমন রয়েছে যে সেটা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার সিসি এর মধ্যে তাহলে তাদের ট্যাক্স এর মূল্য এখন হবে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা।
✓ যদিও এত বেশি সিসির গাড়ি বর্তমানে খুব কম দেখা যায়। তারপরও যাদের গাড়ির সিসি ৩৫০০ এর ওপর রয়েছে তাদের জন্য এই ট্যাক্স এর মূল্য ধরা হয়েছে 2 লক্ষ টাকা।
উপরে আমরা যে সমস্ত হিসেবগুলো আপনাদেরকে দিয়ে দিলাম এগুলো মূলত গাড়ির ট্যাক্স ফি বা ফিটনেস ফি হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এর সাথে আবার একটি ট্যাক্স টোকেন ফি দিতে হয় যেটার মূল্য হচ্ছে ৫৮০২ টাকা ।
আশা করি গাড়ির ফিটনেস কত টাকা সে সম্পর্কে আপনারা সবকিছু বুঝে গেছেন। আপনার গাড়ির ফিটনেস টি দেখার জন্য এটাকে অবশ্যই প্রতিনিয়ত চেক করতে হবে। তো এখন আমরা এই গাড়ির ফিটনেস চেক করার যে বিষয়টি সেটা নিয়ে কথা বলব।
গাড়ির নাম্বার দিয়ে ফিটনেস চেক
যদি আপনি আপনার গাড়ির ফিটনেস টি চেক করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার গাড়ির মূল নাম্বার লাগবে। এখানে এই গাড়ির ফিটনেস চেক করার মাধ্যমে আপনারা গাড়ির ফিটনেস মেয়াদ কতদিন আছে বা আপনার গাড়ির ফিটনেস এর ফি কত ধরা হয়েছে সেগুলো সুন্দরভাবে দেখতে পারবেন।
যেহেতু আপনার একটি গাড়ি আছে আর এই গাড়িতে ফিটনেস আছে তাই অবশ্যই প্রিতিনিয়ত আপনার গাড়ির ফিটনেস চেক করা দরকার। যদিও আগে এই ফিটনেস চেক করার জন্য তাদের অফিসে যেতে হতো কিন্তু এখন যেহেতু ইন্টারনেটের যুগ তাই এটি আপনি ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে করতে পারবেন।
তো যদি আপনি ফিটনেস চেক করতে চান তাহলে কিন্তু আপনার অবশ্যই গাড়ির নাম্বারটি প্রয়োজন হবে। তো চলুন এখন আমরা সবাই এই গাড়ির নাম্বার দিয়ে ফিটনেস চেক করার নিয়ম ভালোভাবে জেনে নেই।
✓ সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার মোবাইলের যেকোনো একটি ব্রাউজার চালু করতে হবে। আপনি চাইলে ক্রম ব্রাউজার কিংবা ফায়ারফক্স এর মত ব্রাউজারগুলো ব্যবহার করতে পারেন ।
✓ ব্রাউজারটিতে ঢোকার পর আপনি সরাসরি সার্চ অপশনে টাচ করবেন এবং সেখানে google.com এ ঢুকে যাবেন।
✓ Google এ ঢোকার পর আপনি সেখানে গুগল সার্চ এ টাচ করে bsp brta gov bd লিখবেন। লেখার পর ইন্টার বাটনে চেপে দিয়ে গুগলে এই লেখাটিকে সার্চ করবে।
✓ এটি লিখে সার্চ করলে সর্ব প্রথমেই আপনাদের সামনে একটি সরকারি ওয়েবসাইট দেখানো হবে তো আপনি সরাসরি এই সরকারি ওয়েবসাইটে ঢুকে যাবেন।
✓ সরকারি ওয়েবসাইটে ঢোকার পর যদি আপনাদের সামনে কোন পপ আপ নটিফিকেশন দেখানো হয় তাহলে সেটা সরাসরি কেটে দিবেন এবং স্ক্রল করে একটু নিচের দিকে যাবেন ।
✓ নিচের দিকে গেলে দেখবেন একটি অপশন আছে সেটা হচ্ছে ফি ক্যালকুলেটর নামের একটি অপশন এবং পাশে ক্যালকুলেটরের আইকন ও দেওয়া আছে। তো আপনারা সিম্পলি এই ক্যালকুলেটর আইকনের ওপর চেপে দিয়ে ওই অপশনের মধ্যে ঢুকে যাবে।
✓ ক্যালকুলেটর আইকনে ঢোকার পর আপনাদের সামনে আরো নতুন দুইটি অপশন দেখানো হবে একটি হচ্ছে নতুন নিবন্ধন মোটরযান ফি এবং আরেকটি হচ্ছে নিবন্ধিত মোটরজান ফি। তো আপনি যেহেতু এখন আপনার গাড়ির ফিটনেস চেক করতে চাচ্ছেন তাই এখানে দ্বিতীয় যে অপশনটি আছে নিবন্ধিত মোটরযান ফি এটিতে চেপে দিতে হবে।
✓ বন্ধুরা নিবন্ধিত মোটরযানের ফি সম্পর্কে জানতে চাইলে সেই অপশনে ঢোকার পর আপনাদের সামনে একটি নতুন ফরম চালু হবে। তো এখন আপনাকে এই ফরম পূরণ করে আপনার গাড়ির ফিটনেস চেক করার কাজটা সেরে নিতে হবে।
✓ এখানে প্রথমে আপনি আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি দিয়ে দিবেন । কিভাবে রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি দিতে হবে তার এক্সাম্পল ঘরটির নিচেই দেওয়া আছে।
✓ তারপর দেখবেন ফি সমূহ নামের একটি অপশন আছে তো সেই অপশনে আপনি সরাসরি চাপ দিলে আপনার সামনে আরো কয়েকটি অপশন চালু হবে।
✓ তো যেহেতু আপনি আপনার গাড়ির নাম্বার দিয়ে ফিটনেস চেক করার জন্য এখানে এসেছেন ওই অপশনটিতে চাপ দিয়ে ফিটনেস নামের অপশনটি সিলেক্ট করে দিতে হবে।
✓ ফিটনেস অপশন টিতে চাপ দিলে নিচে আরেকটি আপনারা সিকিউরিটি কোড পাবেন যেটা ইমেজের মধ্যে দেওয়া থাকবে। তো এই ইমেজের মধ্যে দেওয়া কোডটি নিছের ঘরে সুন্দরভাবে বসাতে হবে। এখানে বলে রাখা ভালো এই সিকিউরিটি কোডটি বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হতে থাকবে।
✓ সিকিউরিটি কোড দেওয়ার পরে আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি আর একবার চেক করবেন এবং সরাসরি ক্যালকুলেট করুন বাটনে চেপে দিবেন।
যখনই আমি সমস্ত ফর্ম সুন্দর ভাবে পূরণ করার পরে ক্যালকুলেট করুন বাটন এ চেপে দিবেন তখন সাথে সাথে আপনার গাড়ির ফিটনেস চেক করতে পারবেন। এভাবে আপনি যেকোনো গাড়ির ফিটনেস খুব সহজেই দেখে নিতে পারবেন।
আশা করবো গাড়ির নাম্বার দিয়ে ফিটনেস চেক করার সিস্টেমটি আপনারা খুব ভালো মতো জেনে গেছে। তারপরও যদি আপনারা এই গাড়ির ফিটনেস চেক করতে গিয়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে সেটা অবশ্যই কমেন্টে আমাদেরকে জানাবেন।
গাড়ির ফিটনেস নবায়ন
বন্ধুরা প্রথমে আপনাকে গাড়ির ফিটনেস চেক করে নিতে হবে এবং দেখতে হবে সেখানে আর মেয়াদ কতদিন আছে। এরপর যদি দেখেন আপনার গাড়ির ফিটনেস এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাহলে অবশ্যই গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করে নিতে হবে।
যদি আপনারা গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করে না নেন তাহলে কিন্তু পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে। তো এখন বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন মেয়াদের ফিটনেস করিয়ে নেয়। আপনি যে কয় বছর মেয়াদের ফিটনেস নিয়েছিলেন অবশ্যই সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এটিকে নবায়ন করতে হবে।
গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করার জন্য আপনাকে আপনার গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে নিকটবর্তী বিআরটিএ এর অফিসে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে আপনার গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করার বিষয়টি তাদেরকে জানালে তারা সাথে সাথে সেটি চেক করে নবায়ন করে দিবে।
আর হ্যাঁ এখানে কিন্তু অবশ্যই আপনার গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করার জন্য ফি দরকার হবে। সেই ফি টি প্রদান করেই আপনাকে কাজটি করে নিতে হবে।
পরিশেষে
বন্ধুরা আজকের এই পোস্টে আমরা গাড়ির ফিটনেস সম্পর্কে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। এখানে আমরা গাড়ির ফিটনেস চেক করার বিষয়ে বেশি গুরুত্বরপ করেছি।
গাড়ির নাম্বার দিয়ে ফিটনেস চেক করার নিয়ম সহ গাড়ির ফিটনেস নবায়ন সম্পর্কেও যোথেস্ট আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া যারা গাড়ির ফিটনেস কত টাকা এটা জানতে চেয়েছিলেন আশা করি তারাও আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
আজকের পোষ্টের কোন বিষয় যদি বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। আর হ্যাঁ অবশ্যই সরকারের নিয়ম কানুন মেনে আপনার গাড়ির ট্যাক্স এর কাগজ ভালো মত রাখবেন এবং অবশ্যই প্রতিনিয়ত এর ফি প্রদান করবেন।